ভাষাবিজ্ঞান ও তার বিভিন্ন শাখা

ভাষাবিজ্ঞান ও তার বিভিন্ন শাখা

ভাষাবিজ্ঞান’ কথাটির মধ্যেই লুকিয়ে আছে এই বিষয়টির নির্যাস, ভাষার বিজ্ঞানই হল ভাষাবিজ্ঞান। অন্যভাবে বললে,

ভাষা নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত চর্চাই হল ভাষাবিজ্ঞানের উদ্দেশ্য। ভাষাবিজ্ঞান বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতােই নিত্য প্রগতিশীল

এবং নিত্য সক্রিয় একটি বিদ্যা (Discipline)। বিজ্ঞান যেমন প্রতিদিন নতুন তথ্য আবিষ্কার করছে এবং সেই নতুন তথ্যের

আলােকে সংশােধন ও পরিমার্জন করছে, ভাষাবিজ্ঞান একইভাবে এগিয়ে চলেছে চরম সত্য আবিষ্কারের দিকে। স্বাভাবিকভাবেই

বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখার মতােই ভাষাবিজ্ঞানের গতি হল বিশেষ (Particular) থেকে সাধারণের (General)-এর দিকে;

‘পদ্ধতি হল আরােহমূলক। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ভাষা সম্পর্কে আলােচনার প্রথম ধাপ হচ্ছে তথ্যসংগ্রহ (Data Collec-

lion) ও নথিভুক্তকরণ (Recording)। তারপর সেই প্রাপ্ত তথ্যকে বিশ্লেষণ (Analysis) করে তার যথাযথ বর্ণনা

Objective Description)। ভাষার উপাদানগুলির এইভাবে বারংবার বিশ্লেষণ থেকে যখন দেখা যায় একই রকম কারণের

পিরিপ্রেক্ষিতে একইরকমের ফল বা প্রতিক্রিয়া আসছে তখন পরবর্তী ধাপে সে ব্যাপারটিকে সাধারণীকৃত করা হয়। এরপরেই

নুমান বা Hypothesis খাড়া করার পালা। এই অনুমান তারপর যাচাইয়ের (Verify) মাধ্যমে পরিণত হয় সূত্রে

(Linguistic Law)। এভাবেই ধাপে ধাপে এগিয়ে চলে ভাষার বিজ্ঞানসম্মত চর্চা।

প্রণালী, ভরসভো স্নায়ুতন্ত্রের সম্পর্ক, এমনকী মানবভাষার সঙ্গে Computer-এর ভাষার সম্পর্ক এগুলিও ভাষাবিজ্ঞানের।

আবার এর পাশাপাশি ভাষার সঙ্গে সমাজ, ভাষার সঙ্গে মানবমন, ভাষার সঙ্গে সাহিত্যের সম্পর্ক ভাষা শিক্ষার।

আলােচনায় প্রবেশ করেছে। সুতরাং, শুধু'ভাষার ভিতরের বিজ্ঞানসম্মত আলােচনাই নয়, ভাষা মানবসভ্যতায় কীভাবে কাজ।

Lingu

তুলনামূলক, ঐতিহাসিক এবং বর্ণনামূলক।

আমাদের মনে রাখতে হবে, ভাষাবিজ্ঞান মানুষের মুখের ভাষার চর্চা করে। লিখিত ভাষা ভাষাবিজ্ঞানের আলােচনায়

আসে না। অনেকে মনে করেন, লিখিত ভাষা ও মুখের ভাষা একই এমনকি অনেকে লিখিত ভাষাকেই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে

মনে করেন। আসলে ব্যাপারটি তার বিপরীত। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানুষ কথা বলছে। মানুষের ভাষার উদ্ভব কীভাবে হয়েছে।

তা নিয়ে সকলে একমত হতে না পারলেও কয়েক লক্ষ বছর আগে মৌখিক ভাষার কাছে লিখিত ভাষা অনেকটাই নবীন।

লেখা শুরু হয়েছে পাঁচ ছয় কি সাত হাজার বছর আগে। মুখের ভাষাকে লিখন পদ্ধতি কখনাে সম্পূর্ণ প্রকাশ করতে পারে না।

লিখিত ভাষার বহু সীমাবদ্ধতা আছে। দ্বিতীয় যে কারণে ভাষাবিজ্ঞান কেবল মৌখিক ভাষাকে গুরুত্ব দেয় তা এই যে, যেখানে

বহুসহস্র কোটি মানুষ কথা বলে বা মৌখিকভাবে ভাষা ব্যবহার করে, সেখানে তার মাত্র কয়েক শতাংশ মানুষ লিখতে জানে।

তাই মুখের ভাষাকেই ভাষাবিজ্ঞানীরা আসল ভাষা বলে মানেন। সুতরাং; ভাষাবিজ্ঞান হল সামগ্রিকভাবে ভাষার (অর্থাৎ

Also Read সিরাজের পর বাংলার মসনদে আরোহন করেছিলেন কে? বাংলায় শিল্পশিক্ষার ইতিহাস

মানুষের মুখের ভাষার) গঠন, প্রকৃতি, পদ্ধতি সম্বন্ধে বিজ্ঞানসম্মত চর্চার নাম। লক্ষণীয় যে, ভাষাবিজ্ঞান কোনাে বিশেষ

একটা দুটো ভাষার কথা বলে না, ভাষাবিজ্ঞান সাধারণভাবে ভাষার কথা বলে।

করে তাও সামগ্রিকভাবে ভাষাবিজ্ঞানের বিষয়।

0 Response to "ভাষাবিজ্ঞান ও তার বিভিন্ন শাখা"

Post a Comment